বিধানসভায় ৩.৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট পেশ, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধের অভিযোগ

বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের অর্থ দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করেছেন। এই সময় সামাজিক কল্যাণ এবং কর্মসংস্থানের জন্য বেশ কয়েকটি নীতি ঘোষণা করেছেন। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বিধানসভায় পরবর্তী আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করার সময় পশ্চিমবঙ্গের ‘আর্থিক অবরোধ’ আরোপ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেও অভিযুক্ত করেন। তিনি ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের জন্য ৩,৬৬,১৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এতে, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের অধীনে তফসিলি জাতি এবং তফসিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের জন্য মাসিক আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে ১২০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে অন্যান্য বিভাগের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়িয়ে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গে আর্থিক অবরোধ আরোপ করেছে। কিন্তু আমরা মাথা নত করব না। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের পাওনা প্রায় ১.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। তিনি মে মাস থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য অতিরিক্ত চার শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ঘোষণা করেছেন। এটি জানুয়ারি মাসে ঘোষিত চার শতাংশ ডিএ থেকে আলাদা হবে।

বাজেটে সিভিক ভলেন্টিয়ার সহ গ্রিন পুলিশ, ভিলেজ পুলিশের জন্য ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ভাতা ১০০০ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্য পুলিশ সিভিক ভলেন্টিয়ারদের জন্য রাজ্য পুলিশের চাকরিতে ২০% সংরক্ষিত থাকবে। ১০০ দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র সংঘাত চরমে চরমে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ২১ লক্ষ শ্রমিকের টাকা ফেব্রুয়ারিতে দেবে রাজ্য সরকার। এরজন্য ৩৭০০ কোটি টাকা খরচ করবে রাজ্য। রাজ্য সরকার শ্রমিকদের বছরে ৫০ দিনের কাজ নিশ্চিত করতে নতুন প্রকল্প ‘কর্মশ্রী’ ঘোষণা করেছে। এর সুবিধা জব কার্ড হোল্ডার যারা তারা পাবেন।মৎস্যজীবীদের ‘সমুদ্রসাথী’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা এবং এতে মৎস্যজীবীরা বছরে ১০ হাজার টাকা পাবেন। এদিকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের হাতে তুলে দেওয়া হবে স্মার্টফোন। এ জন্য এই খাতে বাজেটে ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি স্কুলে মিড-ডে মিল রাঁধুনিদের বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। এখন থেকে তারা মাসে ১৫০০ টাকা করে ভাতা পাবেন।

এদিন বিধানসভায় বাজেট নিয়ে তোলপাড় শুরু করে বিজেপি বিধায়করা। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিরোধীদের যদি কোনও মতামত থাকে তবে তারা বাজেট শেষ হওয়ার পরে আলোচনা করতে পারে। তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু এটা বিজেপির অফিস নয়। এটা বিরোধীদের রাজনীতি করার জায়গা নয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা কী কাজ করেছি তা জানার অধিকার জনগণের আছে। আমরা এই ধরনের নোংরা রাজনীতি করি না।। যে সব বিজেপি বিধায়ক তোলপাড় সৃষ্টি করছেন তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন যে তারা রাজ্যের বিরুদ্ধে। তারা বাংলা বিরোধী। তারা বাংলার মানুষের মঙ্গল চায় না। তিনি বিজেপি সদস্যদের জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা লজ্জিত নন যে আপনারা আমাদের বাজেট পেশ করতে দিচ্ছেন না? বাজেট নিয়ে বক্তব্যের পর আপনার মতামত জানানো যাবে। এটা আপনার বিজেপি দলীয় কার্যালয় নয়। তিনি আরও বলেন, আপনার মনে রাখা উচিত যে আপনি সংসদ থেকে ১৪৭ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করেছেন। কিন্তু আমরা সেই পথে যেতে চাই না। আপনি দুর্বল হতে পারেন, আমরা না, আমরা এই লড়াই করব। সাহস থাকলে বাজেট পেশ করে তারপর কথা বলুন, তার আগে নয়।

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও