নতুন ২ নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, আপত্তি কংগ্রেসের

লোকসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দুজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি নির্বাচন কমিশনে দুটি নাম অনুমোদন করেছে। জ্ঞানেশ কুমার গুপ্তা ও সুখবীর সিং সান্ধুকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তারা দুজনই অবসরপ্রাপ্ত আইএস। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার অনুপচন্দ্র পান্ডের অবসর এবং সম্প্রতি অরুণ গোয়েলের পদত্যাগের কারণে নির্বাচন কমিশনে দুই নির্বাচন কমিশনারের পদ শূন্য ছিল।

জ্ঞানেশ কুমার কেরালা ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার। জ্ঞানেশ কুমার একজন ১৯৮৮ ব্যাচের আইএএস অফিসার। তিনি ৩১ জানুয়ারী ২০২৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। জ্ঞানেশ কুমারকে অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ মনে করা হয়। তিনি সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি কেন্দ্রীয় সহযোগিতা মন্ত্রকের সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন রাম জন্মভূমি তীর্থ ট্রাস্ট গঠনে জ্ঞানেশ কুমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যখন ৩৭০ ধারা অপসারণ করা হয়েছিল, তখন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জম্মু ও কাশ্মীর ডেস্কের ইনচার্জ ছিলেন।

অন্যদিকে সুখবীর সিং সান্ধুকেও নতুন নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। সান্ধু উত্তরাখণ্ড সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসএএস সান্ধুর দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর ২০২১ সালে বিজেপির পুষ্কর সিং ধামি, সুখবীর সিং সান্ধুকে উত্তরাখণ্ডের মুখ্য সচিব করেন। সান্ধু এর আগে কেন্দ্রে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ছিলেন। সুখবীর সিং সান্ধু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি দুইজনেরই প্রিয় ছিলেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাছাই কমিটিতে বিরোধী সদস্য এবং কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তিন সদস্যের কমিটিতে একজন প্রধানমন্ত্রী, একজন মন্ত্রী এবং আমি বিরোধী দল থেকে। শুরু থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারের পক্ষে। অধীর দাবি করেছেন, সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের নাম আগে তাকে দেওয়া হয়নি। অধীর বলেছেন, “সার্চ কমিটির নথিগুলি সভা শুরুর আট থেকে ১০ মিনিট আগে আমার সাথে ভাগ শেয়ার করেছিল। আমাকে ছয়টি নামের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হয়েছিল এবং আইনমন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল এই ছয় কর্মকর্তাকে নির্বাচন কমিটির কাছে সুপারিশ করেছিলেন।” কংগ্রেস নেতার মতে, ছয় কর্মকর্তার নাম ছিল- উৎপল কুমার সিং, প্রদীপ কুমার ত্রিপাঠি, জ্ঞানেশ কুমার, ইন্দ্রবর পান্ডে, সুখবীর সিং সান্ধু এবং সুধীর কুমার গংধর রাহতে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসেকে অধীর বলেন, ” অমিত শাহ জ্ঞানেশ কুমার এবং সুখবীর সিং সান্ধু দুই নাম প্রস্তাব করেছিলেন। এর পরে প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলেন আমি কিছু বলতে চাই কিনা। আমি তাকে বলেছিলাম যে আমি ইতিমধ্যেই সরকারকে শর্টলিস্ট করা প্রার্থীদের বায়ো-প্রোফাইল সরবরাহ করতে বলেছি। এতে তাদের প্রোফাইল দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমাকে সাহায্য করত। কিন্তু তা করা হয়নি। আমি গতকাল রাতে আমার নির্বাচনী এলাকা থেকে দিল্লি পৌঁছেছি এবং ২১২ জন অফিসারের বিস্তারিত তালিকা পেয়েছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে ২১২ জন অফিসার কিভাবে? আমি কি তাদের সততা, অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা সম্পর্কে বিশদ জানতে পারি? এই কারণেই আমি সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের বায়ো-প্রোফাইল চেয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, “আমি তাদের বলেছিলাম যে আপনি এই দুটি নাম প্রস্তাব করেছেন। আপনি কেবল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করছেন। আমিও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করব এবং আমার মতানৈক্য রেকর্ড করব। আমি তাদের আমার মতানৈক্য রেকর্ডে নিতে বলেছি। ২১২জন অফিসারের বিস্তারিত জানার এবং খুঁজে বের করার জন্য আমি কোন জাদুকর নই।” অধীর রঞ্জন চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন,“এটা স্পষ্ট যে তারা কাকে নিয়োগ দেবে এবং আনুষ্ঠানিকতা হিসাবে বৈঠক ডেকেছিল। এটা স্পষ্ট যে সরকার শুধুমাত্র তাদের পছন্দের একজনকে নিয়োগ দেবে।”

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও