সুপ্রিম কোর্টে চলছে চাকরি বাতিল মামলার শুনানি

স্কুল সার্ভিস কমিশনের অধীনে ২৫,৭৫৩টি চাকরি বাতিলের নির্দেশ দেই কলকাতা হাইকোর্ট। শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছাই রাজ্য সরকার। নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে এসএসসি ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। গত সোমবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি হয়। কিন্তু সেই কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেইনি সুপ্রিম কোর্ট। মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সোমবার মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, শুনানি পিছিয়ে যায় মঙ্গলবার।

শুরু হল শুনানি

সুপ্রিম কোর্টে শুরু হল এসএসসি মামলার শুনানি। সওয়াল করছেন রাজ্যের আইনজীবী।

নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজ্যের ভূমিকা স্পষ্ট করলেন আইনজীবী

রাজ্যের আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদী সুপ্রিম কোর্টকে বললেন, ‘‘নিয়োগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে রাজ্য যুক্ত নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এসএসসি। রাজ্য মোট শূন্যপদ নির্ধারণ করে এবং নিয়োগের পরে বেতন দেয়।’’

মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে সওয়াল নিয়ে মন্তব্য রাজ্যের আইনজীবীর

রাকেশ বললেন, সুপারনিউমেরিক পোস্ট নিয়ে আমি শুধু বলব। যেখানে মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপারনিউমেরিক পোস্ট নিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে।

সুপারনিউমেরিক পদ কেন তৈরি হয়েছিল? ব্যাখ্যা রাজ্যের

সুপারনিউমেরিক পদ বেআইনি নিয়োগ ঢাকতে তৈরি করা হয়নি। চাকরি বাতিলের ফলে ওয়েটিংলিস্ট থেকে নিয়োগ করার জন্যই সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তার জন্য ৬৮৬১ পদ তৈরি করা হয়েছিল।

আদালতকে বোকা বানাতে চায়নি রাজ্য, বললেন রাজ্যর আইনজীবী

রাজ্যের আইনজীবী সওয়াল করলেন, আদালতকে বোকা বানানোর জন্য সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি করা হয়নি। রাজ্য শুধু চেয়েছিল চাকরি বাতিলের পরে শূন্যপদে ওয়েটিং লিস্ট থেকে নিয়োগ করতে। বেআইনি নিয়োগ আড়াল করার চেষ্টা করা হয়নি। প্রমাণস্বরূপ বলা যেতে পারে, বেআইনি নিয়োগকে যুক্ত করা হয়নি সুপারনিউমেরিক পদের জন্য।

প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন রাজ্যকে, জবাব দিল রাজ্যও

প্রধান বিচারপতি রাজ্যের আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলেন, কেন ২০২২ সালে সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিলেন?

জবাবে আইনজীবী বললেন, প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আড়াই বছর পরে ২০২১ সালে মামলা দায়ের হয়। বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ ওঠে। তার পরেই ২০২২ সালে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কেন আপনারা সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরি করতে চেয়েছিলেন? আবার প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির

প্রধান বিচারপতি আবার জানতে চাইলেন কেন আপনারা সুপারনিউমেরিক পদ তৈরি করতে চেয়েছিলেন? তাঁর প্রশ্ন, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া। ২০১৯ প্যানেলের মেয়াদ শেষ। ২০২১ সালে মামলা দায়ের। তার মানে বলতে চাইছেন ৬ বছর পরে কোনও ওয়েট লিস্টেড প্রার্থী বেআইনি অভিযোগ তুলে চাকরি চাইতে পারবেন না।

খারাপ অভিসন্ধি ছিল না, জবাব রাজ্যের

প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের জবাব, সুপারনিউমেরিক পদ বানানোর পিছনে রাজ্যের কোনও খারাপ অভিসন্ধি ছিল না।

মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত নিয়ে সওয়াল রাজ্যের

সুপার নিউমেরিক পদ তৈরির নেপথ্যে রাজ্যের খারাপ অভিসন্ধি ছিল না জানিয়ে রাজ্যের আইনজীবী কলকাতা হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন সুপ্রিম কোর্টে। তাঁর সওয়াল, কেন মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে সিবিআই অনুসন্ধানের নির্দেশ দেওয়া হল? সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানতে চাইলেন, সেখানে কি কোনও অপরাধ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য উত্তরে জানাল, পাওয়া যায়নি।

মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়ে রাজ্যের আইনজীবী এবং প্রধান বিচারপতির কথোপকথন

প্রধান বিচারপতি: আমাদের নির্দেশেই তো সিবিআই তদন্ত চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ওই তদন্তের আওতায় সুপারনিউমেরিক পোস্টও রয়েছে।

রাজ্যের অন্য আইনজীবী এনকে কৌল: মন্ত্রিসভা শুধুমাত্র ওয়েটিংলিস্ট থেকে সুপারনিউমেরিক পোস্ট তৈরির বিষয়ে নোট নিয়েছিল। কোনও নিয়োগ করা হয়নি। তা হলে মন্ত্রিসভা কী ভাবে অপরাধ করল?

রাজ্যের আইনজীবীর আরও ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্টে

রাজ্যের আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টকে বললেন, কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের বক্তব্য না শুনেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ওই নির্দেশে এ-ও বলা হয়েছে যে, মন্ত্রিসভার সদস্যদের হেফাজতে নিতে পারবে সিবিআই। এই নির্দেশের ফলে শুধু মন্ত্রিসভা নয়, সরকারের সকলেই সিবিআই তদন্তের আওতার মধ্যে পড়ে যান। এর মধ্যে রাজ্যের আইনবিভাগ এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল।

চাকরি বাতিল আদালতের এক্তিয়ারে পড়ে না: এসএসসি

এ বার শুরু হল এসএসসির বক্তব্যের শুনানি। এসএসসির আইনজীবী জয়দীপ গুপ্ত বললেন, ‘‘চাকরি বাতিল আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। সুপ্রিম কোর্টের অনেক রায়েই এর আগে তা বলা হয়েছে।’’

রাজ্যের আইনজীবী বললেন, ‘‘মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে বেনিয়মের কোনও প্রমাণ নেই। তাঁরা বৈঠক করেছিলেন শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। কোনও কিছু কার্যকর করা হয়নি। তার পরেও যদিপুরো মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত করানো হয়, তবে সংসদীয় গণতন্ত্র কোথায় যাবে, কী করবে?’’

এসএসসিকে পাল্টা প্রশ্ন বিচারপতির, জবাবে কী বলল রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশন?

এ বার প্রধান বিচারপতির প্রশ্নের মুখ কেন এসএসসি। জানতে চাইলেন, ‘‘ওএমআর শিট নষ্ট করেছিলেন কেন? এ নিয়ে কোনও আইন আছে?’’ জবাবে এসএসসির আইনজীবী গুপ্তের জবাব: আমাদের কাছে ডিজিটাল ডাটা রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি: স্ক্যানিং করার জন্য নাইসাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু আপনার চেয়ারম্যান তো ওই কাজ সম্পর্কে বিশদে জানতেন না বলেছেন।

গুপ্ত: নাইসাকে লিমিটেড টেন্ডার দিয়ে স্ক্যানিংয়ের কাজ করানো হয়েছিল।

প্রধান বিচারপতি: কিন্তু ‘মিরর ইমেজ’ তো নেই বলে বলা হচ্ছে।

এসএসসি: মিরর ইমেজ নাইসার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে। সেগুলো প্রকাশও করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি: কিন্তু টেন্ডারের জন্য কত জনকে ডেকেছিলেন? আপনারা সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। অথচ যথাযথ ভাবে টেন্ডার ডাকেননি কেন?

যে কেউ এসএসসির দফতরে ঢুকে পড়ে কী করে! প্রশ্ন সুপ্রিম কোর্টের

প্রধান বিচারপতি বললেন, এসএসসি দায়িত্ববানের মতো কাজ করেনি। যে কেউ এসএসসির অফিসে ঢুকে যাচ্ছেন। আর এসএসসি তা জানে না। এটা কী করে হয়? আপনারা নাইসাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আর সেই নাইসা অন্য এক সংস্থাকে নিয়ে আপনাদের অফিসে ঢুকে গেল! অদ্ভুত ব্যাপার, সেটা আপনারা জানলেনও না। এটা কী ভাবে হয়? কালকে যে কেউ আমার অফিসে ঢুকে পড়বে, আর আমি জানতে পারব না। এটা কি আদৌ হতে পারে?

এসএসসি দায়িত্ববানের মতো কাজ করেনি: মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘এত সব গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় তথ্য অন্য সংস্থার হাতে তুলে দিলেন আপনারা। এটা কি আপনাদের দায়িত্বশীল কাজ? আপনাদের অফিসে স্ক্যান করতে যাচ্ছে। আর আপনারা কিছু জানেন না! এটা কি হতে পারে? সুপ্রিম কোর্টের স্ক্যানিং রুমে কেউ গেলে আদালতের কর্মীরা তা জানবেন না, এটা তো হতে পারে না। আপনাদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছিল সব তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার।’’ আদালতের এই মন্তব্যে এসএসসি জানায়, ‘‘সিবিআই নাইসার সার্ভার থেকে ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ পেয়েছে।’’ জবাবে সুপ্রিম কোর্ট বলে, ‘‘সেটা তো আরও খারাপ। আপনাদের ডাটা বাইরের কোনও সংস্থা থেকে পাওয়া যাচ্ছে। এখানে তো দেখা দেখা যাচ্ছে বর মাপে নিরাপত্তা লঙ্ঘন করা হয়েছে!’’

পদ্ধতিগত জালিয়াতি করেছেন! এসএসসির কাজে বিস্মিত সুপ্রিম কোর্ট

এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং সেই সংক্রান্ত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জালিয়াতি করেছে বলে মন্তব্য করল সুপ্রিম কোর্ট! প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘এত দিন তাহলে তথ্য জানার অধিকারে যা যা বলতেন, সে সব অসত্য ছিল?’’

সরকারির চাকরির উপর থেকে বিশ্বাস চলে যাবে: সুপ্রিম কোর্ট

প্রধান বিচারপতি বললেন, ‘‘আজকাল সরকারি চাকরি খুবই দুষ্প্রাপ্য এবং মূল্যবান। এই সব দেখে তো সরকারি চাকরির প্রতি বিশ্বাস চলে যাবে। এখনও সমাজের পিছিয়ে পড়ার অংশের মানুষ নিজের সন্তানদের সরকারি চাকরি হবে ভেবে আশায় থাকেন।’’

যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা কী ভাবে আলাদা করা সম্ভব, জানাল এসএসসি

২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পাওয়া যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের কী ভাবে আলাদা করা যাবে, তা জানিয়ে দিল এসএসসি। সুপ্রিম কোর্টকে তারা বলল, ‘‘সিবিআইয়ের তথ্যের উপর ভরসা করা গেলে যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা আলাদা করা সম্ভব।’’

মাথা ব্যথা হলে পুরো মাথাটাই কেটে ফেলা যুক্তিযুক্ত নয়: মধ্যশিক্ষা পর্ষদ

এ বার সুপ্রিম কোর্টে বলতে শুরু করল মধ্য শিক্ষা পর্ষদ। মঙ্গলবার সমস্ত পক্ষেরই বক্তব্য শোনার কথা সুপ্রিম কোর্টের। পর্ষদ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চকে বলল, ‘‘হাই কোর্টের ওই রায়ের ফলে ১৭-১৮ হাজার শিক্ষক ভুক্তভোগী। যোগ্য এবং অযোগ্য বাছাই করা সম্ভব হলে এদের চাকরি রাখা হোক। মাথা ব্যথা হচ্ছে বলে পুরো মাথা কেটে দেব এটা হতে পারে না!’’

শিক্ষক পাব কোথা থেকে? প্রশ্ন পর্ষদের
সুপ্রিম কোর্টকে পর্ষদের প্রশ্ন, ‘‘সবার চাকরি চলে গেলে শিক্ষক পাব কোথা থেকে? সিনিয়র শিক্ষকদের চাকরি চলে যাচ্ছে। এর পরে আগামিদিনে স্কুলগুলির জন্য প্রধান শিক্ষক পাওয়া যাবে না।’’

সাময়িক বিরতিতে সুপ্রিম কোর্ট আবার শুনানি দুপুর ২টোয়

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বক্তব্য শোনার পরে সাময়িক বিরতি সুপ্রিম কোর্টে। দুপুর ২ টোর পরে আবার শুনানি।

(সূত্র- আনন্দবাজার)

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও