বাংলাদেশে সহিংসতার অবসান ও শান্তির আবেদন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের

বেশ কয়েকদিন থেকেই উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করেছে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে। শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় বিক্ষোভ, নিহত হয়েছেন কয়েক শত মানুষ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন। এখনও কিছু কিছু জায়গায় হিংসার ঘটনা সামনে আসছে। এদিকে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের (জেআইএইচ) জাতীয় সভাপতি সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি। তিনি প্রতিবেশী দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন জানান। পাশাপাশি জামায়াত সভাপতি দেশটিতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এক বিবৃতিতে সাদাতুল্লাহ হুসাইনি বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই সহিংসতার নিন্দা জানাই এবং সংখ্যালঘু ও অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।”

মঙ্গলনার মিডিয়াকে দেওয়া এক বিবৃতিতে সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসাইনি বলেছেন, “জামায়াতে ইসলামী হিন্দ বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি এবং এই অঞ্চলের জন্য এর সুদূরপ্রসারী পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। বাংলাদেশে বর্তমান অস্থিরতা শেখ হাসিনা সরকারের স্বৈরাচারী ও কঠোর শাসন ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ফলাফল। বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনগুলি অন্যায় অনুশীলনের ব্যাপক অভিযোগের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যার ফলে সমগ্র বিরোধী দল নির্বাচনী প্রক্রিয়া বর্জন করেছিল। এটি গণতন্ত্রের ভিত্তিকে ক্ষুন্ন করেছে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে। উপরন্তু, প্রতিহিংসার রাজনীতির মাধ্যমে ভিন্নমতের কণ্ঠকে নীরব করার পূর্ববর্তী সরকারের প্রচেষ্টা গভীরভাবে উদ্বেগজনক ছিল। বিশিষ্ট বিরোধী নেতাদের অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, যা গণতান্ত্রিক বক্তৃতাকে দমিয়ে রেখেছিল এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছিল।”

জেআইএইচ সভাপতি আরও বলেছেন, “বিক্ষোভকারী ছাত্রদের প্রতি শেখ হাসিনার শাসনামলের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যধিক সহিংস এবং দমনমূলক, যুদ্ধে ব্যবহৃত পদক্ষেপের অনুরূপ। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার করতে এবং অবিলম্বে জনগণের আস্থাশীল সরকার গঠন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য অবিলম্বে এবং সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের বিষয়ের প্রধান কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানায়। এই সময়ের মধ্যে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের সকলকে ন্যায়বিচার দিতে হবে এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি পেতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই বিলম্ব না করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা করতে হবে যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে যা বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটায়। মিডিয়ার প্রতিবেদনগুলি ইঙ্গিত করে, দুর্বৃত্তরা এই অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পত্তি ভাংচুর করছে এবং নিরীহ নাগরিকদের, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালাচ্ছে।”

সৈয়দ সাদাতুল্লাহ বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে এই সহিংসতার নিন্দা জানাই এবং সংখ্যালঘু ও অন্যান্য দুর্বল গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। এটা লক্ষণীয়, বিপুল সংখ্যক নাগরিক এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্থান এবং সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসছেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যাতে এই অঞ্চল ও প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য নিরাপত্তা হুমকিতে পরিণত না হয় সে ব্যবস্থাও নিতে হবে। আমরা প্রতিবাদকারী এবং সাধারণ জনগণকে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য আবেদন করছি। সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সংখ্যালঘু ও অরক্ষিত গোষ্ঠীর জীবন ও সম্পত্তি রক্ষা করা অপরিহার্য। জামায়াতে ইসলামী হিন্দ এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশের জনগণের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং সংকটের দ্রুত সমাধানের আশা করে, যা সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করে।”

সর্বশেষ সংবাদ

জনপ্রিয় গল্প

সর্বশেষ ভিডিও